শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) - মিশ্রিত পানি শোধন

মিশ্রিত পানি থেকে লৌহ দুর করার পাশাপাশি পানিকে জীবাণুমুক্ত করার উদ্দেশ্যে এর সাথে ১৫ পিপিএম মাত্রায় ব্লিচিং পাউডার (৬০-৬৫% সক্রিয় ক্লোরিন উপাদান) প্রয়োগ করতে হবে। ব্লিচিং পাউডারে ক্লোরিনের উপস্থিতির কারণে জীবাণু প্রতিরোধে এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আবার ব্লিচিং পাউডার একটি শক্তিশালী অক্সিডাইজিং এজেন্ট (Oxidizing agent) হওয়ায় পানি থেকে লৌহ মুক্তকরণে এর ব্যাপক কার্যকারিতা রয়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পানিতে ১৫ পিপিএম মাত্রায় ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগ করে উত্তমরূপে বায়ুসঞ্চালন (strong aceration) করা হলে ব্লিচিং পাউডারের হাইপাক্লোরাইডের সাথে পানিতে থাকা লৌহের বিক্রিয়ায় FeCl2 এর ঘন লাল তলানি সৃষ্টি হয়। পরে বায়ু সঞ্চালন বন্ধ করা হলে এ তলানী ধীরে ধীরে তলায় জমা হয় এবং পানি সম্পূর্ণরূপে লৌহমুক্ত হয়ে পড়ে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে ৩-৫ দিন সময়ের প্রয়োজন হয়। এরূপ পদ্ধতিতে লৌহমুক্ত কারার পরে উৎপাদন কাজে ব্যবহারের পূর্বে পানিতে ক্লোরিনের অনুপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া এরূপ পদ্ধতিতে লৌহমুক্ত করার পরে পানি উৎপাদন ট্যাংকে সঞ্চালনের পূর্বে অধঃক্ষিপ্ত লাল বর্ণের তলানি যেন কোনোভাবেই ঢুকতে না পারে তা নিশ্চত করা জন্য ট্যাংকে পানির প্রবেশমুখে পলিপ্রোপাইলিনের ব্যাগ-ফিল্টার ব্যবহার করা যেতে পারে।

ক্লোরিনের সংস্পর্শে যেমন বিভিন্ন রোগজীবাণুর মৃত্যু ঘটে, তেমনি পানিতে ক্লোরিনের উপস্থিতির কারণে চিংড়ির ডিম, লার্ভা বা পিএল এমনকি ডিমওয়ালা চিংড়িরও মৃত্যু হতে পারে, ডিমওয়ালা চিংড়ির প্রজনন ক্ষমতা কমে যেতে পারে অথবা হ্যাচিং-এর হার কমে যেতে পারে। তাছাড়া অবশিষ্টাংশের উপস্থিতির কারণে গলদা চিংড়ির লার্ভা বা পিএল বিকলাঙ্গ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ক্লোরিন মিশ্রিত পানি ব্যবহারের পূর্বে উত্তমরূপে ক্লোরিনযুক্ত করে নেয়া প্রয়োজন। উৎপাদন কাজে ব্যবহারের পূর্বে পানিতে ক্লোরিনের উপস্থিতির মাত্রা পর্যবেক্ষণ করে এর অনুপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে পানিকে ক্লোরিনযুক্ত করা যায়।

বায়ু সঞ্চালনের সাহায্যে ক্লোরিন মুক্তকরণ: ব্লিচিং পাউডার/ক্লোরিন মিশ্রিত পানিতে উচ্চগতিতে বায়ু সঞ্চালন করা হলে প্রাথমিকভাবে পানিতে ক্লোরিনের বিষক্রিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে বাতাসের অক্সিজেনের সাথে ক্লোরিনের বিক্রিয়ায় পানি ধীরে ধীরে ক্লোরিনযুক্ত হতে থাকে এবং ১-৩ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে ক্লোরিনমুক্ত হয়ে পড়ে।

সূর্যালোকের সাহায্যে ক্লোরিনমুক্তকরণ: প্রখর সূর্যালোকে ক্লোরিনযুক্ত পানির ক্লোরিনের বিষক্রিয়া বৃদ্ধি পেয়ে রোগজীবাণু দ্রুত ধ্বংস হয়। পরবর্তীতে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ক্লোরিন মুক্তকরণের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। সূর্যালোকের উপস্থিতি অপেক্ষা অনুপস্থিতিতে পানি ক্লোরিনমুক্ত হতে অধিক সময়ের প্রয়োজন হয়।

উভয় পদ্ধতির সমন্বয়ের মাধ্যমে ক্লোরিন মুক্তকরণ: ক্লোরিনযুক্ত পানিকে প্রখর সূর্যালোকের নিচে রেখে উত্তমরূপে বায়ু সঞ্চালন করা হলে ক্লোরিনমুক্ত হওয়ার কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। প্রকৃতপক্ষে হ্যাচারিতে এভাবেই ক্লোরিনযুক্ত পানিকে ক্লোরিনযুক্ত করা হয়ে থাকে।

সোডিয়াম থায়োসালফেট ব্যবহারে ক্লোরিন মুক্তকরণ: ক্লোরিনযুক্ত পানিতে সুর্যালাকের উপস্থিতিতে বায়ুসঞ্চালন করে সেখানে উপস্থিত প্রতি ১ পিপিএম ক্লোরিনের জন্য ১ পিপিএম মাত্রায় সোডিয়াম বায়োসালফেট প্রয়োগ করা হলে পানি দ্রুত ক্লোরিনমুক্ত হয়। সোডিয়াম থায়োসালফেট ব্যবহারের ২/৩ ঘন্টার মধ্যেই উক্ত পানিকে উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা যায়। তবে লার্ভা বা পিএল-এর উপরে অতিরিক্ত সোডিয়াম থায়োসালফেটের কিছু ক্ষতিকর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই সোডিয়াম থায়োসালফেট ব্যবহার কম করাই উত্তম।

Content added By
Promotion